মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র জীবন সালমান শাহ’র। করেছিলেন ২৭টি ছবি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নব্বইয়ের দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সুদর্শন নায়কের নাম সালমান শাহ। মৃত্যুর আগে ও পরে সবগুলো ছবিই সুপারহিট। আজও কাঁদে সালমান ভক্তের প্রাণ। আজও স্মৃতি হাতরে বেড়ান সালমান যুুগের মানুষরা, চলচ্চিত্রের কথা বলতে গিয়ে।
নিয়তির পরিহাস! রহস্যজনক এক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পতন হলো সালমান নামের ধূমকেতুর। তবে একটুও ম্লান হয়নি তার আলোর। আজও ঢাকাই ছবিতে রোমান্টিক, সফল নায়কদের উদাহরণ সালমান। আজও যুবকরা সালমানের ভঙ্গিতে প্রিয়ার উদ্দেেশ্যে গেয়ে ওঠেন রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর গান- ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো….’।
সালমান শাহ নেই ২০ বছর হয়ে গেছে। গঙ্গার অনেক জল গড়িয়েছে স্মৃতির মহাকাল ছুঁয়ে। সালমান ভক্তদের আগ্রহের শেষ নেই তার জীবনী ও তার সঙ্গে জড়িত প্রতিটি বিষয়ের প্রতি। আরও মজার ব্যাপার, সালমান যুগের না হয়েও এ প্রজন্মের সিনেমাপ্রেমীরাও সালমানকে মানেন নায়কের আদর্শ হিসেবে। দেশের বিভিন্ন হলে সালমানের পুরনো ছবিগুলো মুক্তি পেলে দর্শক উপস্থিতি তারই প্রমাণ দেয়।
সালমান শাহ’র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় তার স্ত্রী সামিরা। রহস্যময়ী এই নারীও সালমানের মতোই গেঁথে আছেন বাংলাদেশি সিনেমাপ্রেমীদের মনে; ভালো-মন্দ অনুভূতির মিশ্রণে।
অনেকেই জানতে চান কী করেন, কেমন আছেন সালমানের স্ত্রী সামিরা? ফেসবুকে চলচ্চিত্র বিষয়ক আইডি ও পেজে সালমান ভক্তরা সালমান ও সামিরাকে নিয়ে নানা স্ট্যাটাস ও ছবি পোস্ট করেন। সেসব পোস্টে দাবি করা হয়, ঢালিউডের শাহরুখ-গৌরী হতে পারতেন সালমান-সামিরা। কেউ কেউ সামিরার প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরা হক এখন থাইল্যান্ড প্রবাসী। সালমানের মৃত্যুর কয়েক বছর পরই তিনি বিয়ে করেছিলেন মুস্তাক ওয়াইজ নামে এক ব্যবসায়ীকে। তাকে নিয়ে থাইল্যান্ডে পেতেছেন নতুন সংসার। বেশ সুখেই আছেন তিনি জৌলুসের জীবন নিয়ে। সেই সংসারে তিন সন্তানের জননী সামিরা। বড় ছেলে ও ছোট দুই মেয়ে।
সেখানে সামিরার ছোট দুই বোন ফাহরিয়া হক ও হুনায়জা শেখ তাদের স্বামী সন্তান নিয়ে বাস করেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশে খুব একটা আসেন না। আসলেও এড়িয়ে চলেন মিডিয়া বা কোলাহল। একান্তই নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করেন। সালমানের মৃত্যুর পর থেকেই নিজেকে সবকিছুর আড়ালে নিয়ে যান তিনি।
গেল বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সামিরার বাবা শফিকুল হক হীরা বেশ কিছু গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, ‘সালমানের মৃত্যুতে আর সবার মতোই আঘাত পেয়েছিল সামিরা। সবাই নায়ক হারানোর ব্যথায় কেঁদেছিল। আর আমার মেয়ে কেঁদেছিল বিধবা হওয়ার যন্ত্রণায়। সেই কষ্ট কেউ বোঝার আগেই তাকে নিয়ে নানা রকম অপবাদ ছড়ানো হলো। যাক, সবার দোয়ায় সামিরা এখন ভালো আছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে তার সুখের সংসার।’
সেই মন্তব্যে সামিরার বাবা আরও জানিয়েছেন চমকপ্রদ এক তথ্য। সালমানের মৃত্যুদিনে নাকি কারও সঙ্গেই কোনো কথা বলেন না সামিরা। নিজের মতো করে চুপাচাপ থাকেন। সালমানের মৃত্যু তিনিও মেনে নিতে পারেননি। মানতে পারেন না ‘সালমানের সাবেক স্ত্রী’ শব্দটিও।
এদিকে সালমানের মা নীলা চৌধুরী সালমানের মৃত্যুর জন্য সামিরাকে দায়ী করে একটি হত্যা মামলা করেছিলেন। তাই সালমানের পরিবারের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করেন না সামিরা।
সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করা সালমান শাহ মাত্র ২১ বছর বয়সে তার মা নীলা চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর মেয়ে সামিরাকে বিয়ে করেন। সেই সময় আলোচিত দম্পতি ছিলেন সালমান-সামিরা।
সামিরার বাবা জাতীয় দলের সাবেক উইকেটকিপার-অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা এবং মা থাইল্যান্ডের নাগরিক চট্টগ্রামের বিউটিপার্লার ব্যবসায়ী লুসি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন